Friday, July 14, 2023

মহাকাশ মহাবিশ্ব পরিচয়


 মহাসাগরের বুকে যাত্রা করা পালতোলা বিশাল এক জাহাজের কথা কল্পনা করুন। একটা কার্গো হোল্ড রয়েছে জাহাজটিতে। তার ভেতর আছে এক বস্তা আলু। ওই বস্তার একটা আলুর ভেতর বাস করে ছোট্ট এক পোকা।

ধরা যাক, জাহাজটি যে মহাসাগরের ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলছে, তার প্রকৃতি উপলদ্ধি করার চেষ্টা করছে পোকাটা। মানুষের মহাবিশ্বের রূপরহস্য অনুসন্ধানের প্রচেষ্টাকে একবার আলুর ওই পোকার কার্যকলাপের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন বিখ্যাত এক বিজ্ঞানী। তিনি ব্রিটিশ জ্যোতির্বিদ স্যার আর্থার এডিংটন। মাত্রাগত দিক থেকে তুলনা করলে তিনি হয়তো ঠিকই বলেছেন। তবে প্রকৃত অর্থে তাঁর কথাটা একদম ভুল। আরও ভালোভাবে বলতে গেলে, আলুর ছোট্ট ওই পোকাকে জ্যোতির্বিদ ও কসমোলজিস্ট বললেই বেশি মানায়। ওই জ্যোতির্বিদ বা কসমোলজিস্ট হয়তো মহাবিশ্বের বিষয়বস্তু ও প্রকৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছেন।  

মেঘমুক্ত স্বচ্ছ রাতে আকাশের দিকে এক পলক তাকালে একগুচ্ছ উজ্জ্বল নক্ষত্র ঝিলমিল করতে দেখতে পাবেন। তার সঙ্গে হয়তো দেখতে পাবেন রূপালী চাঁদ ও কিছু গ্রহ। আবার বিগ বিয়ারের মতো কিছু পরিচিত নক্ষত্রমণ্ডলও শনাক্ত করতে পারবেন কেউ কেউ। এসব দেখে কারও কারও ধারণা জন্মাতে পারে, মহাবিশ্ব হয়তো স্রেফ কিছু নক্ষত্রগুচ্ছ দিয়ে তৈরি। আর সেগুলো বিভিন্ন গ্রহ ও উপগ্রহসহ বেশ চিত্তাকর্ষক। কিন্তু না, এগুলোই মহাবিশ্বের সবটা নয়। আসলে এসব মহাজাগতিক বস্তু থেকে দূরে, আরও বহুদূরে মহাবিশ্বের আরও অনেক কিছু রয়েছে। তবে সেগুলো খালি চোখে দেখা যায় না! 

আকাশে যেসব নক্ষত্র দেখা যায়, তাদের প্রতিটিই আমাদের সূর্যের মতো। নক্ষত্রদের ওসব গুচ্ছকে বলা হয় মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি (বাংলায় আকাশগঙ্গা ছায়াপথ)। টেলিস্কোপের মাধ্যমে উদঘাটিত হয়েছে, এরকম লাখো গ্যালাক্সি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আমাদের মহাবিশ্বে। এদের প্রতিটিই গঠিত হয়েছে বিপুল সংখ্যক নক্ষত্র দিয়ে। আবার এসব গ্যালাক্সির অবস্থান পরস্পরের কাছ থেকে বিপুল দূরত্বে। অন্য গ্যালাক্সিগুলো আমাদের কাছ থেকে এত দূরে রয়েছে যে সেগুলো আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না। কাজেই রাতের আকাশে যেটুকু দেখা যায়, সেটা হলো বিশাল-বিপুল মহাবিশ্বের অতি সামান্য কণামাত্র। কাজেই আমাদের মহাবিশ্বকে সঠিকভাবে বুঝতে এবং একে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হলে প্রথমেই মহাজাগতিক বিবরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বড় বড় সংখ্যাগুলো আয়ত্ব করা জরুরি।

নিয়মতান্ত্রিকভাবে সেটা করতে হবে। সেজন্য চলুন, আমাদের নিজেদের গ্রহ পৃথিবী দিয়ে কাজটা শুরু করা যাক। পৃথিবীর ব্যাসার্ধ প্রায় ৬ হাজার ৪০০ কিলোমিটার (সংক্ষেপে কিমি)। আধুনিক পরিবহন বা যাতায়াতের মানদণ্ডে এটা বেশ ছোট একটা সংখ্যা। পৃথিবীর চারপাশে একটা বাণিজ্যিক বিমান প্রায় ৪০ ঘন্টায় একপাক ঘুরে আসতে পারে। পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের মহাজাগতিক বস্তুটির নাম চাঁদ। এই উপগ্রহটা পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০০,০০০ কিমি বা ৪ লাখ কিমি দূরে অবস্থিত। এই দূরত্বটা পৃথিবীর ব্যাসার্ধের ৬০ গুণ।

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার অ্যাপোলো ১১ নভোযানে চড়ে প্রথমবার চাঁদে পা রেখেছিল পার্থিব মানুষ। এই দূরত্ব পাড়ি দিতে নভোযানটির সময় লেগেছিল প্রায় চার দিন। চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। প্রায় ৩০ দিনে পৃথিবীর চারদিকে একবার পাক খায় এটি। আবার পৃথিবী নিজেও সূর্যের চারদিকে প্রতিনিয়ত ঘুরছে। আমাদের গ্রহ থেকে সূর্য রয়েছে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন বা ১৫ কোটি কিমি দূরে। হিসেব মতে, এই দূরত্ব পাড়ি দিতে অ্যাপোলো ১১ নভোযানের সময় লাগবে প্রায় পাঁচ বছর।

সূর্যের চারপাশের বিভিন্ন দূরত্বের কক্ষপথে ঘুরছে পৃথিবীর মতো আরও কিছু গ্রহ। সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহটির নাম বুধ। এরপরে রয়েছে শুক্রগ্রহ (এটা আমাদের কাছে পরিচিত সন্ধ্যাতারা নামে)। সূর্যের তৃতীয় গ্রহটিই হলো আমাদের পৃথিবী। পৃথিবীর পরে আরও বেশি দূরত্বে রয়েছে যথাক্রমে মঙ্গল (লাল গ্রহ), বৃহস্পতি, শনি (এর বলয় রয়েছে), ইউরেনাস, নেপচুন এবং প্লুটো। [আসলে বৃহস্পতি, ইউরেনাস এবং নেপচুনেরও বলয় আছে। তবে এগুলো শনির বলয়ের তুলনায় নিতান্ত ছোট। সেজন্য শনির কথাই বিশেষভাবে বলা হয়েছে।—অনুবাদক] একসময় সৌরজগতের সবচেয়ে দূরবর্তী গ্রহ ছিল প্লুটো। এর দূরত্ব পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যবর্তী দূরত্বের প্রায় ৪০ গুণ। এভাবে আমাদের গ্রহ ব্যবস্থার ব্যাসার্ধ প্রায় ৬ হাজার মিলিয়ন কিমি। [চলতি শতকের প্রথম দিকে গ্রহের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে প্লুটো। একে এখন বলা হয় বামন গ্রহ। কাজেই সৌরজগতের গ্রহের সংখ্যা এখন ৮টি।—অনুবাদক]

দেখা যাচ্ছে, দূরত্বগুলো এরই মধ্যে বেশ বড় হতে শুরু করেছে। কাজেই এসব বড় এককগুলোকে যদি জ্যোতির্বিদ্যাগত দূরত্বে প্রকাশ করা হয়, তাহলে আমাদের জন্য সুবিধাজনক। একটা পেন্সিলের দৈর্ঘ্য সেন্টিমিটারে মাপা যায়, কিন্তু দুটো শহরের মধ্যবর্তী দূরত্ব বেশ বড় একটা সংখ্যা। তাই একে মাপা হয় কিলোমিটার এককে। একইভাবে মহাজাগতিক মাত্রা প্রকাশের জন্য কিলোমিটারের মতো কোনো পার্থিব একক অপর্যাপ্ত। ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এরকম একটা একক হলো ‘লাইট ইয়ার’ বা আলোকবর্ষ। এখানে ‘ইয়ার’ বা ‘বর্ষ’ শব্দটা থাকলেও এটা আসলে সময় পরিমাপের একক নয়, বরং দূরত্ব পরিমাপের একক। এক আলোকবর্ষ দূরত্ব হলো এক বছরে আলো যেটুকু দূরত্ব পাড়ি দেয়। এক সেকেন্ডে আলো পাড়ি দেয় প্রায় ৩০০,০০০ বা ৩ লাখ কিমি পথ [বা ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল]। সে হিসেবে এক আলোকবর্ষ হল প্রায় ১০ মিলিয়ন মিলিয়ন কিমি। পুরোটা অঙ্কে লিখলে সংখ্যাটা হবে এরকম: ১০,০০০,০০০,০০০,০০০ কিমি। লেখার সুবিধার্থে এ পরিমাণ বোঝাতে আমরা ১০১৩ কিমি চিহ্ন ব্যবহার করি। এই চিহ্নের মানে হলো ১০ সংখ্যাটিকে ১৩ বার গুণ করা বা ১-এর পর ১৩টি শূন্য। কাজেই এক আলোকবর্ষ মানে প্রায় ১০১৩ কিমি বলা যায়।

মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে সূর্য যেমন গড়পড়তা একটা নক্ষত্র, মহাবিশ্বের বিপুল সংখ্যক গ্যালাক্সির ভেতর আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিও তাই। শক্তিশালী টেলিস্কোপে দেখা গেছে, মহাবিশ্বে আমাদের নিজে গ্যালাক্সির মতো প্রায় ১০০ মিলিয়নের বেশি গ্যালাক্সি রয়েছে।

আমরা যখন বড় পরিসরের কথা বিবেচনা করি, তখন আলোকবর্ষ আসলেই দরকারি একক। আগেই বলেছি, মিল্কিওয়ে নামে আমাদের গ্যালাক্সিতে নক্ষত্রের সংখ্যা প্রায় ১০০,০০০ মিলিয়ন। এসব নক্ষত্রের ভেতর সূর্যও একটা সাধারণ নক্ষত্র। সংক্ষিপ্ত প্রতীক পদ্ধতি ব্যবহার করে আমরা বলতে পারি, আমাদের গ্যালাক্সিতে নক্ষত্র রয়েছে প্রায় ১০১১টি। আমাদের সূর্যের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্রের নাম প্রক্সিমা সেন্টাউরি (এর অবস্থান সেন্টোরাস নক্ষত্রমণ্ডলে)। নক্ষত্রটি আমাদের কাছ থেকে প্রায় ৪ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে। অন্য কথায়, একটা আলোক রশ্মি আমাদের সৌরজগতের গ্রহব্যবস্থা পাড়ি দিতে সময় লাগে প্রায় ১১ ঘন্টা। আর সেই আলো আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টাউরিতে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় চার বছর! (এই পথ পাড়ি দিতে অ্যাপোলো ১১ নভোযানের সময় লাগবে প্রায় এক মিলিয়ন বা ১০ লাখ বছর!) পৃথিবীর আকাশে যেসব নক্ষত্র খালি চোখে দেখা যায়, তার সবই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির অন্তর্গত। এগুলো আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত। তাদের প্রতিটিই আমাদের সূর্যের মতোই অনেক বড় ও উজ্জ্বল। আবার তাদের চারপাশে সৌরজগতের মতো গ্রহব্যবস্থাও থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রটির নাম সিরিয়াস। আমাদের কাছ থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৮ আলোকবর্ষ। অরিয়ন বা কালপুরুষ নক্ষত্রমণ্ডলে আমাদের পরিচিত নক্ষত্র লাল বর্ণের বেটেলজুস বা আর্দ্রা। নক্ষত্রটির দূরত্ব প্রায় ৬৪২ আলোকবর্ষ। আমাদের কাছ থেকে পোল স্টার বা ধ্রুবতারার দূরত্ব প্রায় ৪৫০ আলোকবর্ষ। ধ্রুবতারা থেকে আমরা আজকে যে আলো পাচ্ছি, তা আসলে নিঃসৃত হয়েছে সেই ১৭ শতকের মাঝামাঝি!

সর্বশেষ হিসেবে, গোটা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ব্যাপ্তি প্রায় এক লাখ আলোবর্ষ। এই ছায়াপথকে বর্ণনা করতে গেলে আমরা দেখতে পাব, আলোকবর্ষও অপর্যাপ্ত বা ছোট একক। সে কারণে জ্যোতির্বিদরা এর চেয়ে বড় একটা একক ব্যবহার করেন। এর নাম কিলোপারসেক (সংক্ষেপে কেপিসি বা kpc)। এক কিলোপারসেক প্রায় ৩ হাজার আলোকবর্ষের সমান। কোনো সাধারণ ছায়াপথের ব্যাসার্ধ প্রায় ১৫ কেপিসি। মহাবিশ্ব ম্যাপিং করার ক্ষেত্রে কিলোপারসেক একক সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। (এই এককে মিল্কিওয়ের ব্যাপ্তি প্রায় ৩০ কেপিসি।)

মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে সূর্য যেমন গড়পড়তা একটা নক্ষত্র, মহাবিশ্বের বিপুল সংখ্যক গ্যালাক্সির ভেতর আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিও তাই। শক্তিশালী টেলিস্কোপে দেখা গেছে, মহাবিশ্বে আমাদের নিজে গ্যালাক্সির মতো প্রায় ১০০ মিলিয়নের বেশি গ্যালাক্সি রয়েছে। মিল্কিওয়ের নিকটতম বড় গ্যালাক্সিটির নাম অ্যান্ড্রোমিডা। এর দূরত্ব প্রায় ৭৭০ কেপিসি (প্রায় ২.৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ)। অ্যান্ড্রোমিডা নক্ষত্রমণ্ডলে একে খালি চোখে অস্পষ্ট ফুটকি হিসেবে দেখা যায়। মিল্কিওয়ের মতোই অ্যান্ড্রোমিডাও গঠিত হয়েছে প্রায় ১০১১টি নক্ষত্রের সমাহারে। (মনে আছে নিশ্চয়, ১০১১ মানে হলো ১০০,০০০,০০০,০০০ বা ১-এর পর ১১টি শূন্য। এই বইতে প্রতীকটা আমরা বারবার ব্যবহার করব।) তবে ছায়াপথটা আমাদের কাছ থেকে বহুদূরে থাকায় এর ভেতরের নক্ষত্রগুলোকে আমরা খালি চোখে আলাদাভাবে দেখতে পাই না।  

মিল্কিওয়ে এবং অ্যান্ড্রোমিডার চারপাশে আরও প্রায় ৩০টি গ্যালাক্সি রয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকটাকে বলা হয় ডোয়ার্ফ গ্যালাক্সি বা বামন ছায়াপথ। সেগুলোর আকার বেশ ছোট এবং তাদের প্রতিটিতে মাত্র প্রায় দশ লাখ বা তার চেয়ে কিছুটা বেশি নক্ষত্র থাকতে পারে। বাকি গ্যালাক্সিগুলো বেশ বড়। মিল্কিওয়ে, অ্যান্ড্রোমিডা এবং এসব গ্যালাক্সি একত্রে মিলে এরপরের মহাজাগতিক একক গঠন করেছে। এদের সাধারণত বলা হয় লোকাল গ্রুপ অব গ্যালাক্সি । এই লোকাল গ্রুপের আকার প্রায় ৩ হাজার কেপিসি (বা ১০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ) বা ৩ মেগা পারসেক। (১০০০ কিলোপারসেককে বলা হয় ১ মেগাপারসেক। সংক্ষেপে এমপিসি বা Mpc।)

দল বা গুচ্ছাকারে গ্যালাক্সিদের একত্রিত হওয়াটা আমাদের মহাবিশ্বের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। জ্যোতির্বিদরা বিপুল সংখ্যক গ্যালাক্সি ক্লাস্টার বা গ্যালাক্সিগুচ্ছ শনাক্ত করেছেন। এদের মধ্যে অনেকগুলোই আমাদের লোকাল গ্রুপের চেয়ে অনেক অনেক বড়। আমাদের লোকাল গ্রুপে গ্যালাক্সির সংখ্যা প্রায় ৮০টি। [সাম্প্রতিক হিসেবে, লোকাল গ্রুপের সদস্য অন্তত ৮০, যার বেশিরভাগই বামন ছায়াপথ। তবে সঠিক সংখ্যাটা এখনও জানেন না জ্যোতির্বিদেরা।—অনুবাদক] গ্যালাক্সি ক্লাস্টারগুলোর মধ্যে কিছু বড় ক্লাস্টারে প্রায় ১ হাজারটি গ্যালাক্সিও থাকতে দেখা গেছে। এদের মধ্যে একটার নাম কোমা ক্লাস্টার।

পৃথিবী থেকে ধাপে ধাপে সুপারক্লাস্টার পর্যন্ত (অন্য কথায়, মহাজাগতিক সিঁড়ি) পৌঁছাতে আমাদের কাঠামোগুলোকে একটি শ্রেণিবিন্যাসের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ছোটটা হলো কোনো নক্ষত্রের চারপাশের গ্রহব্যবস্থা বা প্ল্যানেটারি সিস্টেম।

মহাবিশ্বে গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের চেয়ে বড় কোনো কাঠামো আছে কি? বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, ক্লাস্টারগুলো নিজেরাই আরও বড় সমষ্টি গঠন করে। একে বলা হয় সুপারক্লাস্টার। এদের একেকটার আকার প্রায় ৩০ থেকে ৬০ মেগাপারসেক। যেমন আমাদের লোকাল গ্রুপকে ভার্গো সুপারক্লাস্টারের এক প্রান্তিক সদস্য বলে মনে করা হয়। তবে গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের মতো সুপারক্লাস্টারের সুনিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তাহলে আমাদের মহাবিশ্বটা কত বড়? শক্তিশালী টেলিস্কোপ ব্যবহার করে আমরা এখন পর্যন্ত ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার মেগাপারসেক দূরত্ব পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছি। অন্য কথায়, আমরা বলতে পারি, মহাবিশ্বের পর্যবেক্ষণযোগ্য এলাকার আকার একটা গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের চেয়ে প্রায় ১ হাজার গুণ বড়। [জ্যোতির্বিদদের সাম্প্রতিক হিসেব মতে, একটা গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের চেয়ে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব কয়েক হাজার গুণ বড় (প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজার গুণ)। পৃথিবী থেকে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের দূরত্ব যেকোনো দিকে প্রায় ১৪ দশমিক ২৬ গিগাপারসেক বা ৪৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ (১ হাজার মেগাপারসেক = ১ গিগাপারসেক বা জিপিসি)। কাজেই গোলকীয় পর্যবেক্ষণযোগ্য এই মহাবিশ্বের ব্যাস প্রায় ২৮ দশমিক ৫ গিগাপারসেক বা ৯৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ।—অনুবাদক]

হয়তো খেয়াল করেছেন, পৃথিবী থেকে ধাপে ধাপে সুপারক্লাস্টার পর্যন্ত (অন্য কথায়, মহাজাগতিক সিঁড়ি) পৌঁছাতে আমাদের কাঠামোগুলোকে একটি শ্রেণিবিন্যাসের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ছোটটা হলো কোনো নক্ষত্রের চারপাশের গ্রহব্যবস্থা বা প্ল্যানেটারি সিস্টেম। এ ধরনের একটা ব্যবস্থার আকার হতে পারে প্রায় ১০ আলোক-ঘন্টা। অন্যদিকে ছায়াপথ গঠন করা নক্ষত্রের সমাহারে আকার হতে পারে প্রায় ২০ কেপিসি (যেখানে নক্ষত্রের সংখ্যা হতে পারে প্রায় ১০১১টি) । গ্যালাক্সিগুলো নিজেরা একত্রিত হয়ে একটা দল এবং গুচ্ছ গঠন করে, যার গড়পড়তা আকার কয়েক মেগাপারসেক হতে পারে। আবার গ্যালাক্সি ক্লাস্টার বা ছায়াপথগুচ্ছ হলো সুপারক্লাস্টারের অংশ, যার আকৃতি প্রায় ৫০ মেগাপারসেক বা তারও বেশি। আর মহাবিশ্বের গোটা পর্যবেক্ষণযোগ্য এলাকার আকার প্রায় ১৪ দশমিক ২৬ গিগাপারসেক।

যদি ধরে নেওয়া হয় প্রায় ১ সেমি আকারের একটা সিকি পয়সা গ্রহব্যবস্থার প্রতিনিধিত্ব করছে, তাহলে আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্রটি হবে প্রায় ৬০ মিটার দূরে। আর আমাদের গ্যালাক্সির আকার হবে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার (মিল্কিওয়ের সীমা প্রায় এক লাখ আলোকবর্ষ হিসেবে)! এখান থেকে আমাদের বোঝা উচিত, আমরা যে গ্যালাক্সিতে বাস করি, তার তুলনায় আমাদের সৌরজগৎ কতটা ক্ষুদ্র। গ্যালাক্সিদের ক্লাস্টারের আকার এর চেয়ে আরও ১ হাজার গুণ বড়। আর গোটা পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব আরও কয়েক হাজার গুণ বড়!

মহাজাগতিক এই সিঁড়ির একদম নিচে রয়েছে সূর্যের চারপাশে ঘূর্ণনরত গ্রহগুলো। তাহলে এই শ্রেণিবিন্যাসের বড় বড় কাঠামো বিষয়টা কী? দেখা যাচ্ছে, ওপরে বর্ণিত কোনো কাঠামোই স্থির নয়। এক্ষেত্রে সূর্য বা গ্যালাক্সির অন্য নক্ষত্রগুলো গ্যালাক্সিতে সেকেন্ডে প্রায় ২০০ কিমি গতিতে ঘুরছে (সংক্ষেপে কিমি সে-১ বা কিমি/সে)। এমনকি আমাদের গ্যালাক্সিও স্থির নেই। সেটাই অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির দিকে প্রায় ১০০ কিমি সে-১  গতিতে ছুটে যাচ্ছে। আবার গোটা লোকাল গ্রুপ প্রায় ৬০০ কিমি সে-১ গতিতে ছুটে যাচ্ছে (ভার্গো সুপারক্লাস্টারের দিকে কোথাও)। এখানে গতি এবং মহাকর্ষীয় বলের মধ্যে একটা সূক্ষ্ণ ভারসাম্য রয়েছে, যা আমাদের মহাবিশ্বকে সচল রেখেছে।

প্রদত্ত বিভিন্ন সিস্টেমের আকার ও এসব সিস্টেমের সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বস্তুর গতি থেকে এসব কাঠামোর প্রতিটি কক্ষপথের সময় গণনা করা যায়। সবচেয়ে ছোট পরিসরে পৃথিবী সূর্যের চারপাশে একপাক ঘুরতে সময় নেয় এক বছর। সেখানে সবচেয়ে দূরের বামনগ্রহ প্লুটো নেয় ২৫০ বছর। গ্যালাক্সিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাল পরিসর বেশ বড়। যেমন সূর্যের মতো একটা নক্ষত্র আমাদের গ্যালাক্সির চারপাশের কক্ষপথে একপাক ঘুরে আসতে সময় নেয় ২০০ মিলিয়ন বছর। আবার কোনো গ্যালাক্সি একটা ক্লাস্টারের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে যেতে সময় লাগে প্রায় ৫ বিলিয়ন বছর। আমাদের মহাবিশ্বের বিভিন্ন বস্তুর বয়সের সঙ্গে এসব সংখ্যার তুলনা করা বেশ মজার। হিসেব মতে, আমাদের পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন বছর। অন্য কথায়, পৃথিবী গঠিত হওয়ার পর থেকে তা সূর্যের চারপাশে ৪ বিলিয়নের বেশি বার ঘুরে এসেছে। সূর্যের মতো সাধারণ নক্ষত্রের আয়ু প্রায় ১০ বিলিয়ন বছর। এ সময়কাল গ্যালাক্সির চারপাশে ঘুরে আসার চেয়ে প্রায় ৫০ গুণ বেশি। বিভিন্ন গ্যালাক্সি, ক্লাস্টার ইত্যাদির মতো বড় বড় কাঠামোর সঠিক বয়স কত, তা আমরা এখনো নিশ্চিত জানি না। তবে আধুনিক হিসেবে এর বয়স প্রায় ১৩ বিলিয়ন বছর হতে পারে [সাম্প্রতিক হিসেবে ১৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩৭০ কোটি বছর]। এই সময়কালেই মহাবিশ্বের বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ মহাজাগতিক ঘটনাগুলো ঘটেছিল।

প্রথম গ্যালাক্সিটা গড়ে উঠছিল প্রায় ১২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২০০ কোটি বছর আগে [সাম্প্রতিক হিসেবে ১৩ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর আগে]। আর ওই গ্যালাক্সির ভেতরের পদার্থ থেকে একে একে গড়ে উঠেছিল নক্ষত্র ও গ্রহগুলো।

আমাদের মহাবিশ্ব যে চমকপ্রদ বৈচিত্র দেখায়, তা শুধু মাত্রাগত দিক দিয়েই সীমাবদ্ধ নয়, বিভিন্ন পরিসরে এর ভৌত পরিঘটনাও প্রচণ্ডভাবে পরিবর্তিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের গ্যালাক্সির নক্ষত্রগুলোর আকার ও বয়স বিভিন্ন রকম। এখানে কিছু নক্ষত্র তাদের শৈশব অবস্থায় রয়েছে, আবার কিছু নক্ষত্র রয়েছে মধ্য বয়সে এবং কিছু বার্ধক্যে। মৃত নক্ষত্রদের কিছু অবশিষ্টাংশও দেখা যায়, যাকে বলা হয় হোয়াইট ডোয়ার্ফ বা শ্বেত বামন, নিউট্রন স্টার এবং সম্ভবত ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর। এই গ্যালাক্সিতে এমন কিছু অঞ্চলও আছে, যেখানে রয়েছে বিপুল পরিমাণ গ্যাস ও ধুলি। সেগুলো উজ্জ্বল নক্ষত্রদের চেয়ে ভিন্ন রকম আচরণ করে। এর পরের পর্বে গ্যালাক্সিগুলোকেও বিভিন্ন রকম আকার ও আকৃতি এবং বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের মহাবিশ্বে কোয়াসারের মতো কিছু রহস্যময় বস্তুও আছে।

ওপরের বিবরণ বেশ কিছু প্রশ্ন তোলে: গ্রহ থেকে সুপারক্লাস্টারের মতো এসব কাঠামো গড়ে উঠল কীভাবে? এরা কবে গড়ে উঠল? সেগুলো নিজেদের ধর্মগুলো পেল কোন ভৌত প্রক্রিয়ায়? মহাকাশে এরা কীভাবে বিন্যস্ত? ভবিষ্যতে এসব কাঠামোর এবং মহাবিশ্বের ভাগ্যে কী ঘটবে?

এসব প্রশ্নগুলোর এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত বেশকিছু উত্তর খুঁজে পেয়েছে আধুনিক কসমোলজি। এসব দেখে মনে হয়, প্রথম গ্যালাক্সিটা গড়ে উঠছিল প্রায় ১২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২০০ কোটি বছর আগে [সাম্প্রতিক হিসেবে ১৩ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর আগে]। আর ওই গ্যালাক্সির ভেতরের পদার্থ থেকে একে একে গড়ে উঠেছিল নক্ষত্র ও গ্রহগুলো। বিভিন্ন গ্যালাক্সি একত্রিত হয়ে পারস্পারিক মহাকর্ষীয় আকর্ষণের অধীনে আসার পর সম্ভবত গড়ে উঠেছিল ক্লাস্টার ও সুপারক্লাস্টারগুলো মতো বড় বড় কাঠামোগুলো। পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক নিয়মগুলোর প্রেক্ষিতে এসব ঘটনাগুলো বোধগম্য বলে মনে হয়। এসব নিয়মের মাধ্যমে বস্তু ও বিকিরণের চরিত্র ব্যাখ্যা করা যায়। পরে এ বিষয়গুলো নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করবো।

অনুবাদক: নির্বাহী সম্পাদক, বিজ্ঞানচিন্তা

মূল: আফটার দ্য ফার্স্ট থ্রি মিনিটস: আমাদের মহাবিশ্বের কাহিনি/ থানু পদ্মানাভান

লেখা:

মূল: থানু পদ্মানাভান, ভাষান্তর: আবুল বাসার

Link: https://www.bigganchinta.com/space/6for9dg2wx

Wednesday, May 31, 2023

অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় (Ways to maintain good gut health)

 Many people suffer from stomach problems. Again, the stomach is related to the brain. Researchers say the gut is connected to millions of neurons, which is why the gut is called the 'second brain' of the human body.

The function of the digestive system is not only to absorb food, but much more. The number of pathogens in our body can make us sick.

Digestive problems or indigestion, gas, constipation etc. suffer more or less everyone. For this, medical scientists say to be careful about what your gut needs.

The gut microbiome and the bacteria, fungi and other microbes living inside the gut play an important role in maintaining human health. Regular exercise, reducing stress, eating foods that increase the level of beneficial bacteria in the gut, and many other habits are beneficial for the gut.

Medical scientist Dr. A person can influence the health of their microbiome through their lifestyle, says Sunni Patel. It can be good or bad.

According to him, it's 'a worthwhile investment', something you're never too young or too old to do.

Some environmental factors, such as diet, have a greater impact on gut health than genes. What you eat not only nourishes you, it feeds and transforms the billions of microbes that live in your gut. Again, your gut is what fights your body against any infection. It absorbs nutrients from the foods you eat and supplies them to the body.

Dr. "You can change the gut bacteria very quickly, even within days," says Patel.

But it takes months to see long-term changes and benefits. The first step in improving gut health is to develop proper eating habits.

What to do to maintain gut health:

Eat as many vegetables as possible

Gut microbes love the fiber found in a variety of vegetables, fruits, nuts, and whole grains. Good food choices are essential to gut health.

Our gut is home to trillions of microbes. Those microbes are very important because they help in the digestion of certain nutrients. Each microbial group acts on a different type of food.

A variety of foods improves gut health, which is related to making us feel healthier.

Vegetables are rich in dietary fiber, vitamins, minerals and iron. Having vegetables like spinach, broccoli in the daily diet is good for health. Banana is a very familiar fruit to us. Bananas contain enough calories and enough fiber.

In addition, experts recommend eating more fiber-rich foods including onions, garlic, and cabbage. Lots of fiber and vegetables keep the gut microbiome healthy. But for some, fiber-rich foods can be sensitive. For this, you must consult your doctor before making any changes in your diet.

Whole grain foods

Whole grains are rich in essential nutrients like fiber, antioxidants and other micronutrients. The fiber in grains acts as a prebiotic for our gut health. It keeps the good bacteria in the gut healthy.

Foods like brown rice, red flour, oats etc. contain sufficient fiber. Experts are of the opinion that keeping them in the daily diet can eliminate various stomach problems and problems like constipation.

Fermented and probiotic foods

Yogurt, kombucha, kimchi, cheese, vinegar, bread, some pickles are fermented foods. These foods contain good bacteria. That bacteria keeps the gut healthy. Therefore, experts recommend such food regularly.

However, experts say to avoid pickles with more oil and yogurt made from high-fat milk.

They mainly recommend eating yogurt.

Avoiding overly processed foods

Experts recommend avoiding overly processed foods to maintain gut health.

Professor Tim Spector of King's College London said it could reduce the number of different species of bacteria in the gut.

For this, he recommends eating less processed foods, which include:

- Sweet or spicy snacks

- Chocolate bars and sweets

- Soda and soft drinks

- Frozen foods like meatballs, fish nuggets

- Processed foods like instant noodles.

Various studies have shown that highly processed foods contain 'bad bacteria'. Which can have a detrimental effect on gut health.

In addition, experts fear that some people may leave high fiber foods out of the diet chart due to the consumption of such foods.

They also say that over-processed foods disrupt the structure, or food matrix, through mechanical or chemical processes. Which makes the food digestible quickly.

As a result, eating such food does not reach the lower intestine, which is not good for gut health.

However, experts believe that more research is needed in this regard.

Avoid eating late at night

Experts advise to keep the time gap between dinner and breakfast at least 12 hours. Eating breakfast and dinner at a wide interval or intermittent fasting is beneficial for gut health.

Professor Tim Spector writes in his book, 'Gut microbes need rest every day as part of the body clock or circadian rhythm, which is very important for our gut health.'

In addition, several other studies have shown that those who fast during Ramadan have increased numbers of beneficial bacteria in their guts and increased microbial diversity (a greater presence of different species in the microbiome).

However, the researchers point out that more research is needed in this regard.

Nutritionist Dr. According to Megan Rossi, 'Gut health plays a very important role in boosting the immune system. Because 70 percent of our immune cells are inside the intestines.

Several studies have revealed that gastro-intestinal or digestive tract problems increase the risk of common illnesses such as colds, coughs, and fevers.

People who always eat the same foods don't have as active or strong gut microbes.

Daily exercise

If intestinal problems occur more, then it is necessary to check how much stress you are under, Dr. Megan Rossi.

A common reason why mood is linked to our gut is that approximately 80 to 90 percent of serotonin is produced in our digestive system.

Serotonin is a type of chemical messenger. With which various body functions are involved from our digestive system to mental diseases. In short, our mood depends on the release of serotonin.

For this, along with eating nutritious food rich in fiber in the daily diet, regular exercise is very necessary. It keeps the body hydrated and keeps the gut healthy.

Alcohol, caffeine and spicy foods should be avoided if you have intestinal problems. Because such ingredients can aggravate intestinal problems. In addition, to maintain good intestinal health, one should always try to sleep well.

A study found that if someone disrupts the body clock by changing their sleep patterns, the cycle of their gut microbes will also be disrupted.

Remember, it is important to treat the gut microbes well to keep them healthy.

Source: BBC

পেটের সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকে। আবার পেটের সাথে মস্তিষ্কের সম্পর্ক রয়েছে। গবেষকরা বলছেন, অন্ত্র লাখো নিউরনের সাথে সংযুক্ত, যে কারণে অন্ত্রকে মানবদেহের ‘দ্বিতীয় মস্তিষ্ক’ বলা হয়।

রিপাকতন্ত্রের কাজ শুধুমাত্র খাবার শোষণ করা নয়, বরং এর চাইতেও আরো বেশি কিছু। আমাদের শরীরে যে পরিমাণ রোগজীবাণু রয়েছে সেগুলো আমাদের শরীরকে অসুস্থ করে ফেলতে পারে।

হজমের সমস্যা বা বদহজম, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি কমবেশি সবাইকে ভোগায়। এ জন্য আপনার অন্ত্রের কী প্রয়োজন সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।

অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম ও অন্ত্রের ভেতরে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও অন্য জীবাণুগুলো মানুষের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত শরীরচর্চা, মানসিক চাপ কমানো, অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা বাড়িয়ে তোলে এমন খাবার খাওয়াসহ আরো অনেক অভ্যাস অন্ত্রের জন্য উপকারী।

চিকিৎসা বিজ্ঞানী ড. সুন্নি প্যাটেল বলছেন, একজন মানুষ তার লাইফস্টাইলের মাধ্যমে তার মাইক্রোবায়োমের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। সেটা ভালো হতে পারে আবার খারাপও হতে পারে।

তার মতে, এটা ‘একটা উপযুক্ত বিনিয়োগ’, যে কাজ করার জন্য আপনি কখনই খুব কম বয়সী বা খুব বেশি বয়সী হতে পারবেন না৷

অন্ত্রের স্বাস্থ্যের ওপর জিনের তুলনায় বেশি প্রভাব ফেলে খাদ্যের মতো পরিবেশগত কিছু বিষয়। আপনি যা খাচ্ছেন তা শুধু আপনার জন্য পুষ্টি নয়, এটি আপনার অন্ত্রে বসবাসকারী কোটি কোটি জীবাণুকে খাওয়ায় এবং পরিবর্তন করে। আবার আপনার অন্ত্রই আপনার দেহে কোনো ইনফেকশন হলে তার বিরুদ্ধে লড়াই করে। আপনি যে খাবারগুলো খাচ্ছেন, তা থেকে পুষ্টি উপাদান শুষে নিয়ে দেহের জন্য সরবরাহ করে।

ড. প্যাটেল বলছেন, ‘আপনি চাইলেই অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াগুলোকে খুব দ্রুত পরিবর্তন করতে পারেন, এমনকি কয়েক দিনের মধ্যেই এটা করা সম্ভব।’

তবে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন ও উপকারিতা পেতে কয়েক মাস সময় লেগে যায়। অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে প্রথমেই যথাযথ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

গাট বা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কী করণীয় :

যতটা সম্ভব সবজি খান
বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, শস্যজাতীয় খাবারে যে ফাইবার থাকে অন্ত্রের জীবাণুগুলো তা পছন্দ করে। অন্ত্রের সুস্থতায় খাদ্য নির্বাচন করা জরুরি।

আমাদের অন্ত্রে রয়েছে কয়েক ট্রিলিয়ন জীবাণুর বসতি। ওই জীবাণুগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ কেননা, তারা নির্দিষ্ট কিছু পুষ্টিকর উপাদান হজম করতে সাহায্য করে। প্রতিটি মাইক্রোবায়াল গ্রুপ একেক ধরনের খাবারের ওপর কাজ করে।

বিভিন্ন বৈচিত্র্যের খাবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে, যা আমাদের আরো সুস্থ হয়ে ওঠার সাথে সম্পর্কিত।

শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমানে ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল ও আয়রন থাকে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পালং শাক, ব্রকোলির মতো শাক-সবজি থাকলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কলা আমাদের খুবই পরিচিত একটি ফল। কলায় রয়েছে পর্যাপ্ত ক্যালরি ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার।

এছাড়া পেঁয়াজ, রসুন, বাঁধাকপিসহ ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও শাকসবজি অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তবে কারো কারো জন্য ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার সংবেদনশীল হতে পারে। এর জন্য খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে।

হোল গ্রেইন ফুড বা শস্যজাতীয় খাবার
শস্যজাতীয় খাবারে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অন্য মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি। শস্যে থাকা ফাইবার আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য প্রিবায়োটিকের কাজ করে। এটা অন্ত্রে থাকা ভালো ব্যাকটেরিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

ব্রাউন রাইস, লাল আটা, ওটস ইত্যাদি খাবারগুলোতে থাকে পর্যাপ্ত ফাইবার। এগুলো প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যাও দূর হতে পারে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ফার্মেন্টেড ও প্রোবায়োটিক ফুড
দই, কম্বুচা, কিমচি, চিজ, ভিনেগার, পাউরুটি, কয়েক ধরনের আচার হলো ফারমেন্টেড ফুড। এই খাবারগুলোতে ভালো ব্যাকটেরিয়া থাকে। ওই ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তাই নিয়মিত এ ধরনের খাবারের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে বেশি তেল দেয়া আচার ও উচ্চ চর্বিযুক্ত দুধের তৈরি দই পরিহার করতে বলেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা মূলত টকদই খাওয়ার পরামর্শ দেন।

অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করা
অন্ত্রের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য বিশেষজ্ঞরা অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন।

কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক টিম স্পেক্টর বলেন, অন্ত্রের মধ্যে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া কমিয়ে দিতে পারে।

এ জন্য অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি, যার মধ্যে রয়েছে :
- মিষ্টি বা মসলাযুক্ত স্ন্যাকস
- চকলেট বার ও মিষ্টি
- সোডা ও কোমল পানীয়
- মিটবল, ফিশ নাগেটের মতো ফ্রোজেন খাবার
- ইনস্ট্যান্ট নুডলসের মতো প্রক্রিয়াজাত খাবার।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারে ‘খারাপ জীবাণু’ থাকে। যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

এছাড়া এমন খাবার গ্রহণের কারণে উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবারগুলোকে কেউ ডায়েট চার্টের বাইরে রেখে দিতে পারেন বলেও আশঙ্কা করেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা আরো বলেন, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের গঠন বা খাদ্যের ম্যাট্রিক্স, যান্ত্রিক বা রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাহত হয়। যা খাদ্যকে দ্রুত হজমযোগ্য করে তোলে।

ফলে এমন খাবার খেলে তা নিম্ন অন্ত্রে পৌঁছায় না, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।

তবে এক্ষেত্রে আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

গভীর রাতে খাবার এড়িয়ে চলা
রাতের খাবার ও সকালের নাস্তার সময়ের ব্যবধান অন্তত ১২ ঘণ্টা রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। একটা বড় ব্যবধানে সকাল ও রাতের খাবার গ্রহণ করা বা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

অধ্যাপক টিম স্পেক্টর তার বইয়ে লিখেছেন, ‘দেহঘড়ি বা সার্কাডিয়ান রিদমের অংশ হিসেবে প্রতিদিনই অন্ত্রের জীবাণুগুলোর বিশ্রাম প্রয়োজন, যা আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

এছাড়া অন্য কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে রমজানে যারা রোজা রাখেন, তাদের অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেড়ে যায় এবং মাইক্রোবায়াল বৈচিত্র্যও (মাইক্রোবায়োমে বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাপক উপস্থিতি) বাড়ে।

তবে এ বিষয়েও আরো গবেষণা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করছেন গবেষকরা।

পুষ্টিবিদ ডা. মেগান রসির মতে, ‘রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার পেছনে অন্ত্রের স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা আমাদের রোগ প্রতিরোধক কোষের ৭০ ভাগ অন্ত্রের ভেতরে থাকে।’

বেশ কয়েকটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে গ্যাস্ট্রো-ইনটেস্টাইনাল বা পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা সর্দি, কাশি, জ্বরের মতো সাধারণ রোগ হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।

যারা সবসময় একই ধরনের খাবার খায় তাদের অন্ত্রের জীবাণুগুলো এতটা সক্রিয় বা শক্তিশালী থাকে না।

দৈনিক ব্যায়াম
যদি অন্ত্রের সমস্যা বেশি দেখা দেয়, তাহলে আপনি কতটা মানসিক চাপে আছেন তা পরীক্ষা করা প্রয়োজন বলে মনে ডা. মেগান রসি।

আমাদের অন্ত্রের সাথে মেজাজ যুক্ত থাকার পেছনে একটি সাধারণ কারণ হলো, আমাদের পরিপাকতন্ত্রে আনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ ভাগ সেরোটোনিন উৎপন্ন হয়।

সেরোটোনিন এক ধরনের রাসায়নিক বার্তাবাহক। যার সাথে আমাদের পরিপাক ক্রিয়া থেকে শুরু করে মানসিক রোগ সংক্রান্ত শরীরের নানা কার্যক্রম জড়িত। এক কথায় সেরোটোনিনের নিঃসরণের ওপর নির্ভর করে আমাদের মেজাজ ভালো থাকা, না থাকা।

এ জন্য দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ফাইবারসমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা খুবই প্রয়োজন। এতে শরীরের আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।

অন্ত্রের সমস্যা থাকলে অ্যালকোহল, ক্যাফেইন ও মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এ ধরনের উপাদান অন্ত্রের সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়া অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভালোভাবে ঘুমানোর চেষ্টা থাকতে হবে সবসময়।

এক গবেষণায় উঠে এসেছে, কেউ যদি ঘুমের ধরন পরিবর্তন করে দেহঘড়ির ছন্দ ব্যাহত করে তবে তার অন্ত্রের জীবাণুগুলোর চক্রও বাধাগ্রস্ত হবে।

মনে রাখতে হবে, অন্ত্রের জীবাণুগুলোকে সুস্থ রাখতে তাদের সাথে ভালো আচরণ করা জরুরি।

সূত্র : বিবিসি

Tuesday, May 30, 2023

বৃষ্টি পড়লে জানালায় বাষ্প জমে কেন? Why does steam accumulate in the window when it rains?

There is probably no Bengali who has not painted on the foggy glass of a rain-soaked window. The windows of the car or bus become foggy in heavy rain. Kids will paint on this free canvas, what's new. But the old man can also be seen looking out of the car window. Leaving these things aside, let's try to know the reason.

When it rains, the weather outside gets quite cold. In this cold, the glass of the car window is also a little cold. Then the temperature inside the car is slightly higher than the outside temperature. Due to this, water vapor in the air inside the car condenses when it comes in contact with the window glass. That is seen accumulating on the inside of the car window glass. For the same reason, if you put ice or cold water in a glass, water droplets appear on the outside due to the accumulation of steam.


বৃষ্টিভেজা জানালার ঝাপসা কাচে ছবি আঁকেননি, এমন বাঙালি বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। ঝুম বৃষ্টিতে গাড়ি বা বাসের জানালার কাচ ঝাপসা হয়ে যায়। বাচ্চা ছেলেমেয়েরা বিনামূল্যের এই ক্যানভাসে ছবি আঁকবে, সে আর নতুন কী। কিন্তু বয়স্ক মানুষটাকেও গাড়ির জানালায় মনের ভুলে ইচ্ছেমতো আঁকিবুঁকি কাটতে দেখা যায়। এসব কথা বাদ দিয়ে বরং কারণটা জানার চেষ্টা করি।

বৃষ্টি পড়লে বাইরের আবহাওয়া বেশ কিছুটা ঠান্ডা হয়ে যায়। এ ঠান্ডায় গাড়ির জানালার কাচও কিছুটা ঠান্ডা হয়। তখন গাড়ির বাইরের তাপমাত্রার তুলনায় ভেতরের তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকে। এ কারণে গাড়ির ভেতরের বাতাসের মধ্যে থাকা জলীয়বাষ্প জানালার কাচের সংস্পর্শে এলে জমে ঘন হয়ে যায়। সেটাই গাড়ির জানালার কাচের ভেতরের দিকে জমতে দেখা যায়। ঠিক একই কারণে কোনো গ্লাসে বরফ বা ঠান্ডা পানি রাখলে বাইরের গায়ে বাষ্প জমে বিন্দু বিন্দু পানি দেখা যায়।

পৃথিবীর শীতলতম স্থান কোনটি? Which is the coldest place on earth?

The climate of Bangladesh is temperate. It means neither too cold nor too hot. But there are many places in the world where survival is difficult due to severe winter. But which is the coldest place in history? Does it change over time? And the coldest - or in which city? Is it always cold there, or does it get colder at certain times of the year? Today's discussion about them.

The average temperature of the earth is minus 25 degrees Celsius to 45 degrees Celsius. But this is average temperature. Temperatures much lower than this are found on earth. Before we know where it is and what is its temperature, let's compare the temperature of our planet with Mercury. Sky-ground difference between day and night temperatures on Mercury. Mercury's daytime temperature is around 430 degrees Celsius. And at night the temperature drops to minus 180 degrees Celsius. Compared to that, the Earth's temperature is quite bearable.

Currently, the coldest place on Earth is the East Antarctic Plateau. Temperatures there can drop as low as minus 98 degrees Celsius. Antarctica is covered with ice sheets throughout the year. According to satellite data, the temperature there reached minus 93 degrees. However, according to information published in the US-based journal Geophysical Research Letters, the temperature sometimes drops even lower.

বাংলাদেশের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ। মানে বেশি শীতও নয়, আবার গরমও নয়। কিন্তু পৃথিবীতে এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে তীব্র শীতের কারণে বেঁচে থাকা মুশকিল। কিন্তু ইতিহাসের শীতলতম স্থান কোনটি? সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কি এটা পাল্টে যায়? আর সবচেয়ে বেশি ঠান্ডাই-বা কোন শহরে? সেখানে কি সবসময় ঠান্ডা থাকে, নাকি বছরের কোনো নির্দিষ্ট সময়ে ঠান্ডা বাড়ে? সেসব নিয়ে আজকের আলোচনা। 

পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা মাইনাস ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এটা গড় তাপমাত্রা। এর চেয়ে অনেক কম তাপমাত্রার দেখা মেলে পৃথিবীতেই। সেটা কোথায় এবং সেখানকার তাপমাত্রা কত, তা জানার আগে বুধ গ্রহের সঙ্গে আমাদের গ্রহের তাপমাত্রার একটু তুলনা করা যাক। বুধের দিন ও রাতের তাপমাত্রার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। দিনে বুধের তাপমাত্রা থাকে প্রায় ৪৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর রাতে তাপমাত্রা নেমে যায় মাইনাস ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সে তুলনায় পৃথিবীর তাপমাত্রা যথেষ্ট সহনশীল।

বর্তমানে পৃথিবীর শীতলতম স্থান পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার মালভূমি। সেখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ৯৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যেতে পারে। অ্যান্টার্কটিকা বরফের চাদরে ঢাকা থাকে সারা বছর। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, সেখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ৯৩ ডিগ্রিতেও পৌঁছেছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জার্নাল জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটারস-এ প্রকাশিত তথ্য মতে, তাপমাত্রা আরও নিচেও নেমে যায় কখনো কখনো। 

পৃথিবীর শীতলতম স্থান পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার মালভূমি
পৃথিবীর শীতলতম স্থান পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার মালভূমি
টেড স্ক্যাম্বোস, ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো-বোল্ডার

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো-বোল্ডারের ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টারের জ্যেষ্ঠ গবেষক টেড স্ক্যাম্বোস। তিনি বলেন, ‘ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা সম্ভবত এর চেয়ে কম হওয়া সম্ভব না।’ কিন্তু অতীতে এটা শীতলতম স্থান ছিল না। ২০১০ সালে অ্যান্টার্কটিকার ভস্টক রিসার্চ স্টেশন ছিল সবচেয়ে শীতল স্থান। এটি অ্যান্টার্কটিকার ভৌগলিক দক্ষিণ মেরু থেকে ১ হাজার ৩০১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানকার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল মাইনাস ৮৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যুক্তরাষ্ট্রের জার্নাল অব জিওফিজিক্যাল রিসার্চ-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ‘পরিস্থিতি অনুযায়ী ভস্টক স্টেশনের তাপমাত্রা মাইনাস ৯৬ ডিগ্রিও হতে পারে।’ অর্থাৎ আগে এটাই ছিল পৃথিবীর কোনো স্থানের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার মালভূমির তাপমাত্রা আরও কমে গেছে, নেমে গেছে সর্বনিম্ন সীমায়।

এতক্ষণ যে দুটি শীতলতম স্থানের কথা বললাম, সেখানে মানুষ স্থায়ীভাবে বাস করে না। ফলে তীব্র শীতেও কারো তেমন কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু মানুষ নিয়মিত বাস করে, এরকম স্থানের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কত? উত্তর, মাইনাস ৭১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাশিয়ার পূর্ব সাইবেরিয়ার ওয়মিয়াকন গ্রামটি পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম স্থান, যেখানে মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস করে। এখানে যারা বাস করে, তারা মূলত পেশায় হরিণ পালক। গ্রামটির গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে সর্বনিম্ন মাইনাস ৭১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯২৪ সালে।

রাশিয়ার পূর্ব সাইবেরিয়ার ওয়মিয়াকন গ্রামটি পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম স্থান, যেখানে মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস করে।
রাশিয়ার পূর্ব সাইবেরিয়ার ওয়মিয়াকন গ্রামটি পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম স্থান, যেখানে মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস করে।
গেটি ইমেজ

উত্তর গোলার্ধে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় গ্রিনল্যান্ডের ক্লিঙ্ক ওয়েদার স্টেশনে। গ্রিনল্যান্ডের বরফের চাদরের মাঝে একটি আবহাওয়া অফিস এটি। ১৯৯১ সালে সেখানে মাইনাস ৬৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এ আবহাওয়া অফিসটি গ্রিনল্যান্ডের সবচেয়ে উঁচু স্থান গুনবিয়র্নের কাছাকাছি ৩ হাজার ১০৫ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এর আগে উত্তর গোলার্ধের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল মাইনাস ৬৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

শীতকালে গ্রিনল্যান্ড বরফের কুয়াশায় সম্পূর্ণ ঢেকে যায়।
শীতকালে গ্রিনল্যান্ড বরফের কুয়াশায় সম্পূর্ণ ঢেকে যায়।
গেটি ইমেজ
এবার দেখা যাক, বিশ্বের শীতলতম শহর কোনটি। এই রেকর্ডটিও রাশিয়ার দখলে। রাশিয়ার ইয়াকাটস্ক শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল মাইনাস ৬২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি এ রেকর্ড গড়ে শহরটি। এর আগে ১৮৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সর্বনিম্ন মাইনাস ৬৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল এ শহরেই। ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষের এ শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯৫ মিটার ওপরে লেনা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। তাই শীতকালে শহরটি বরফের কুয়াশায় সম্পূর্ণ ঢেকে যায়। 
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়।
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়।

বিশ্বের তাপমাত্রা নিয়ে তো অনেক কথা হলো। শেষ করার আগে চলুন, দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কত, সেটা জানা যাক। না, বাংলাদেশের তাপমাত্রা কখনো হিমাঙ্কের নিচে নামেনি। অর্থাৎ, ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে যায়নি। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৯৬৮ সালে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।


Source: https://www.bigganchinta.com/feature/q8weoh40ls